ইসলামে কুকুর পালন হারাম কেন? কারণ ও ব্যাখ্যা

 ইসলামে কুকুর পালন হারাম কেন? কারণ ও ব্যাখ্যা


ইসলামে কুকুর পোষা নিয়ে কিছু স্পষ্ট নির্দেশনা এবং নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যদিও ইসলামে প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি ও দয়া প্রদর্শনের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তবে কুকুর পালনের ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হয়েছে। কুকুর পালনকে সরাসরি হারাম বলা হয়নি, তবে বিশেষ কিছু কারণের জন্য এর ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে। এ ব্লগে আমরা ইসলামে কেন কুকুর পালনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে আলোচনা করব।


১. কুকুরের অপবিত্রতা (নাজাসাহ)

ইসলামিক ফিকহ (ইসলামী আইন) অনুসারে, কুকুরের লালা এবং শরীর অপবিত্র (নাজিস) হিসেবে বিবেচিত হয়। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর হাদিসে বলা হয়েছে, “যদি কুকুর তোমাদের পাত্রে মুখ দেয়, তবে তা সাতবার ধুয়ে ফেলবে এবং একবার মাটি দিয়ে পরিষ্কার করবে” (মুসলিম ২৭৯)। এই নির্দেশনা থেকে বোঝা যায় যে, কুকুরের শরীর থেকে নির্গত পদার্থ অপবিত্র হিসেবে গণ্য হয়, যা একজন মুসলমানের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।


২. ফেরেশতাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হওয়া

কুকুর পালনের ব্যাপারে ইসলামে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য একটি হাদিস হলো, "ফেরেশতারা সেই ঘরে প্রবেশ করেন না, যেখানে ছবি বা কুকুর রয়েছে" (বুখারি ৩২২৫)। ফেরেশতারা যে ঘরে প্রবেশ করেন না, সে ঘরে আল্লাহর রহমত এবং বরকতও কমে যায়। এই কারণে কুকুরকে ঘরের ভেতরে রাখা ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ এটি আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতির কারণ হতে পারে।


৩. ইবাদতের বাধা সৃষ্টি

কুকুর পালন করলে তা ঘরের পরিবেশে অপবিত্রতা সৃষ্টি করতে পারে, যা ইবাদত (নামাজ, কুরআন তেলাওয়াত) করার সময় সমস্যার কারণ হতে পারে। ইসলামে পবিত্রতার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এবং নামাজ পড়ার জন্য শুদ্ধ পরিবেশ অপরিহার্য। কুকুরের উপস্থিতি নামাজের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে, বিশেষ করে যদি তার লালা বা শরীর স্পর্শ করে।


৪. কুকুর পালন করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কিন্তু পুরোপুরি নিষিদ্ধ নয়

ইসলামে কুকুর পালনের ব্যাপারে হারাম শব্দটি সরাসরি ব্যবহৃত হয়নি, তবে নির্দিষ্ট কিছু উদ্দেশ্যে কুকুর পালন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যেমন, শিকার করার জন্য, ফসলের জমি বা পশুপালন রক্ষার জন্য এবং ঘরের প্রহরী হিসেবে কুকুরকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক হাদিসে নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “যদি কেউ শিকার, ফসল বা পশুপালন ছাড়া কুকুর পালন করে, তবে তার সওয়াব থেকে প্রতিদিন একটি কিরাত (পরিমাণ) কমে যায়” (বুখারি ২৩২২)।

এ থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামে বিশেষ কারণে কুকুর পালন বৈধ হলেও, সাধারণত এটি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে এবং পোষ্য হিসেবে কুকুর রাখা আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিকর বলে বিবেচিত।


৫. কুকুরের প্রতি দয়া এবং মানবতা

ইসলামিক শিক্ষা অনুসারে, প্রাণীদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহাম্মদ (সা.) এর জীবন থেকে জানা যায় যে, তিনি কুকুরসহ সকল প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এক হাদিসে বর্ণিত আছে যে, একবার একটি পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করানোর জন্য একজন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ পেয়েছিলেন (বুখারি ৩২৮৫)। তাই, কুকুরের প্রতি নিষ্ঠুরতা বা নির্যাতন করা সম্পূর্ণরূপে হারাম। বরং, তাদের প্রতি দয়া ও যত্নশীল হওয়া উচিত।


৬. আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ

ইসলামের এই নিষেধাজ্ঞার পিছনে কিছু আধুনিক বৈজ্ঞানিক যুক্তিও রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কুকুরের লালা এবং শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং রোগজীবাণু থাকতে পারে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষত, যারা কুকুরের সংস্পর্শে থাকে, তাদের মধ্যে কিছু রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই, ইসলামের এই নির্দেশনা স্বাস্থ্য রক্ষার দিক থেকেও কার্যকর হতে পারে।


ইসলামে কুকুর পালনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞার মূল কারণ হলো পবিত্রতা রক্ষা এবং আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা বজায় রাখা। তবে, নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনীয়তার জন্য কুকুর পালন করা অনুমোদিত হয়েছে। ইসলামে কুকুরকে অপমান করা বা কষ্ট দেওয়া হারাম, বরং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত। ইসলামের এই নির্দেশনা আমাদের কুকুরের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ এবং পবিত্রতার গুরুত্ব বোঝাতে সাহায্য করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন