জিকিরের গুরুত্ব ও প্রতিদিনের জিকিরের ফযিলত
ইসলামে জিকির বা আল্লাহর স্মরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। জিকিরের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করি, আত্মিক প্রশান্তি পাই, এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বরকত লাভ করি। আল্লাহর প্রিয় বান্দারা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহকে স্মরণ করে, তাঁর নিকট সাহায্য চায়, এবং তাঁর প্রশংসা করে। নিচে জিকিরের গুরুত্ব, প্রতিদিনের জিকিরের ফযিলত এবং এর বিভিন্ন উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জিকিরের গুরুত্ব কোরআন ও হাদিসের আলোকে
১. আল্লাহর নৈকট্য লাভ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ করো, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো।"
(সূরা বাকারা, আয়াত ১৫২)
আল্লাহ আমাদের স্মরণ করতে বলেছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যদি আমরা তাঁকে স্মরণ করি তবে তিনি আমাদের স্মরণ করবেন। এটি আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম সহজ মাধ্যম।
২. আত্মিক প্রশান্তি লাভ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
"জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর শান্তি পায়।"
(সূরা আর-রাদ, আয়াত ২৮)
যারা নিয়মিত জিকির করে, তারা মানসিক প্রশান্তি লাভ করে। জিকির আমাদের মনকে প্রশান্ত করে এবং দুশ্চিন্তা দূর করে।
৩. আমলের ভারী হওয়া
হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন:
"দুইটি বাক্য যা রাহমানের প্রিয় এবং খুবই হালকা, তবে (কেয়ামতের দিনে) আমলনামায় অনেক ভারী হবে। তা হল: সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযীম।"
(সহীহ বুখারি ও মুসলিম)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নিয়মিতভাবে এই দু’টি বাক্য বলা অত্যন্ত সহজ হলেও আল্লাহর কাছে এর ফযিলত অনেক বেশি।
প্রতিদিনের জিকিরের ফযিলত
নিচে কিছু দৈনন্দিন জিকির এবং এগুলোর ফযিলত তুলে ধরা হলো:
১. সুবহানাল্লাহ (পবিত্র আল্লাহ)
সুবহানাল্লাহ বললে আল্লাহর প্রশংসা করা হয় এবং এটি গুনাহ মাফের একটি মাধ্যম।
২. আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর)
আলহামদুলিল্লাহ বলা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। নিয়মিত এটি বললে আল্লাহ আমাদের ওপর আরও দয়া করেন।
৩. আল্লাহু আকবার (আল্লাহ মহান)
আল্লাহু আকবার বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করি। এটি আমাদের ইমানকে মজবুত করে।
৪. লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই)
এ বাক্যটি তাওহিদের মূল কথা। এটি বললে মানুষ পাপমুক্ত হতে পারে এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে।
৫. আস্তাগফিরুল্লাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি)
নিয়মিত আস্তাগফিরুল্লাহ বললে আল্লাহ আমাদের গুনাহ ক্ষমা করেন এবং আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরকত প্রদান করেন।
প্রতিদিনের জিকিরের উপকারিতা
১. আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত প্রাপ্তি
যারা নিয়মিত জিকির করে, আল্লাহ তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। আল্লাহ তাদের জীবনকে শান্তিময় ও বরকতময় করেন।
২. পাপমুক্তি
জিকির গুনাহের ক্ষমা লাভের একটি সহজ মাধ্যম। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে জিকির করলে আল্লাহ আমাদের ছোট-বড় গুনাহ মাফ করেন।
৩. রিজিকের বরকত
নিয়মিত জিকির করলে রিজিকের বরকত বৃদ্ধি পায়। জিকির জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আল্লাহর অনুগ্রহ এবং দয়া নিয়ে আসে।
৪. শয়তান থেকে রক্ষা পাওয়া
যারা নিয়মিত আল্লাহকে স্মরণ করে, তাদের শয়তান থেকে সুরক্ষা প্রদান করা হয়। শয়তান তাদের কুমন্ত্রণা দিতে পারে না এবং তাদের থেকে দূরে থাকে।
৫. আখিরাতে উচ্চ মর্যাদা লাভ
হাদিসে উল্লেখ আছে, যারা নিয়মিত জিকির করে, আল্লাহ তাদের আখিরাতে বিশেষ মর্যাদা দান করবেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিকির
- সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহি - একশো বার পড়লে গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
- আয়াতুল কুরসি - প্রতিদিন একবার পড়লে আল্লাহর পক্ষ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- সূরা ফালাক ও সূরা নাস - সকালে ও রাতে পড়লে আল্লাহর নিকট সুরক্ষা পাওয়া যায়।
- লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ - এটি বলা কঠিন সময়ে ধৈর্য বাড়ায় এবং মনের প্রশান্তি আনে।