নবজাতক শিশুর জন্য টিকাদান: নবজাতক শিশুর কোন সময়ে কোন টিকা দিতে হয়?

নবজাতক শিশুর জন্য টিকাদান: নবজাতক শিশুর কোন সময়ে কোন টিকা দিতে হয়?


নবজাতকের সুস্বাস্থ্যের জন্য সময়মতো টিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জন্মের পর থেকে শিশুর ইমিউন সিস্টেম উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধী টিকা প্রদান করা হয়। এই ব্লগে নবজাতকের জন্য প্রয়োজনীয় টিকা এবং টিকাদানের সময়সূচি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

নবজাতক শিশুর টিকাদান কেন গুরুত্বপূর্ণ?

নবজাতকের শরীরে সঠিকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠতে কিছু সময় লাগে, এবং এই সময়ে শিশু বিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকে। টিকাদান শিশুকে হাম, পোলিও, হেপাটাইটিস, যক্ষ্মাসহ আরও বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়। তাই নবজাতকের জন্য টিকাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সময়মতো এই টিকাগুলি প্রদান করা উচিত।

নবজাতক শিশুর জন্য টিকাদান সময়সূচি

১. জন্মের সময়

  • বিসিজি (BCG): যক্ষ্মা (টিবি) প্রতিরোধের জন্য। এটি জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেয়া হয়।
  • ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন (OPV): পোলিও প্রতিরোধের জন্য। জন্মের পরই এই টিকা খাওয়ানো হয়।
  • হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B): হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে। জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রথম ডোজটি দেয়া হয়।

২. ৬ সপ্তাহে

  • ডিপিটি (DPT-1): ডিপথেরিয়া, পার্টুসিস এবং টিটেনাস প্রতিরোধে।
  • হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B-2): দ্বিতীয় ডোজ হেপাটাইটিস বি।
  • হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি (HIB-1): নিউমোনিয়া ও মেনিনজাইটিস প্রতিরোধে।
  • ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন (OPV-1): পোলিওর প্রথম ডোজ।

৩. ১০ সপ্তাহে

  • ডিপিটি (DPT-2): দ্বিতীয় ডোজ।
  • হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B-3): তৃতীয় ডোজ।
  • হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি (HIB-2): দ্বিতীয় ডোজ।
  • ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন (OPV-2): দ্বিতীয় ডোজ।

৪. ১৪ সপ্তাহে

  • ডিপিটি (DPT-3): তৃতীয় ডোজ।
  • হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বি (HIB-3): তৃতীয় ডোজ।
  • ওরাল পোলিও ভ্যাকসিন (OPV-3): তৃতীয় ডোজ।

৫. ৬ মাসে

  • হেপাটাইটিস বি (Hepatitis B-4): চতুর্থ ডোজ, যদি প্রয়োজন হয়।
  • ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza): শীতকালীন ফ্লু প্রতিরোধে। এটি বছরে একবার দেয়া হয়।

৬. ৯ মাসে

  • হাম (Measles): হাম প্রতিরোধে।
  • রুবেলা (Rubella): রুবেলা বা জার্মান মিজেলস প্রতিরোধে। হাম ও রুবেলার সম্মিলিত টিকাটি (MR টিকা) প্রায়শই ৯ মাসের সময়েই দেয়া হয়।

৭. ১২ মাসে (১ বছর)

  • জাপানিজ এনসেফালাইটিস (Japanese Encephalitis): নির্দিষ্ট এলাকায় এই টিকা দেয়া হয়।
  • হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A): হেপাটাইটিস এ সংক্রমণ প্রতিরোধে।

৮. ১৫ থেকে ১৮ মাসে

  • এমএমআর (MMR): হাম, মাম্পস, এবং রুবেলা প্রতিরোধে।
  • ভ্যারিসেলা (Varicella): জলবসন্ত প্রতিরোধে।

৯. ২ বছর

  • টাইফয়েড ভ্যাকসিন (Typhoid): টাইফয়েড প্রতিরোধে।
  • হেপাটাইটিস এ (Hepatitis A-2): দ্বিতীয় ডোজ।

১০. ৫ বছর

  • ডিপিটি বুস্টার (DPT): রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করার জন্য।

নবজাতক শিশুর টিকাদানের কিছু সাধারণ পরামর্শ

  • সঠিক সময় মেনে চলা: টিকাগুলি নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
  • পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার প্রতি সজাগ থাকা: কিছু টিকার পরে হালকা জ্বর, ইনজেকশন স্থানে ব্যথা বা ফুলে যেতে পারে, যা সাময়িক এবং প্রায়শই নিজে থেকেই সেরে যায়।
  • পরামর্শের জন্য চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ: শিশুর শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা প্রদানের সময় পরিবর্তন হতে পারে।

নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকাদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে টিকা প্রদান শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং বিভিন্ন মারাত্মক রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখে। সুতরাং, সময়মতো শিশুদের টিকাদান নিশ্চিত করা প্রত্যেক অভিভাবকের দায়িত্ব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন