কোন বয়সে শিশুদের কত ঘুম জরুরী?
শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের জন্য সঠিক পরিমাণে ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা ঘুমের সময় শারীরিক বৃদ্ধি, মস্তিষ্কের বিকাশ এবং স্মৃতিশক্তি সংরক্ষণ করে। কিন্তু বয়সের সাথে সাথে শিশুদের ঘুমের চাহিদা পরিবর্তিত হয়। আজকের ব্লগে আমরা বিভিন্ন বয়সে শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় ঘুমের পরিমাণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শিশুদের ঘুমের চাহিদা (বয়স অনুযায়ী)
১. নবজাতক (০-৩ মাস)
নবজাতক শিশুদের ঘুমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। সাধারণত, তারা প্রতিদিন ১৪ থেকে ১৭ ঘণ্টা ঘুমায়। নবজাতকরা প্রায় ২-৪ ঘণ্টার ঘুমের পর জাগ্রত হয় এবং আবার ঘুমিয়ে পড়ে। এ সময়ে তাদের ঘুমের ছন্দ ঠিকমতো গড়ে ওঠেনি, তাই রাত এবং দিনের মধ্যে তাদের ঘুমের সময়ের বিশেষ পার্থক্য থাকে না।
২. শিশু (৪-১১ মাস)
এই বয়সের শিশুদের জন্য দৈনিক ১২ থেকে ১৫ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। প্রায় ৬ মাস বয়সে শিশুরা সাধারণত রাতে দীর্ঘ সময় ঘুমানো শুরু করে এবং দিনে দুটি ছোট্ট ঘুমের সময় (ন্যাপ) নেয়। এই সময়ের মধ্যে ঘুমের রুটিন স্থির করতে অভিভাবকরা সহায়তা করতে পারেন।
৩. টডলার (১-২ বছর)
এক থেকে দুই বছরের টডলারদের জন্য প্রতিদিন ১১ থেকে ১৪ ঘণ্টা ঘুম দরকার। এ বয়সে, শিশুরা সাধারণত রাতের দীর্ঘ ঘুমের সাথে সাথে দিনে একটি ছোট ন্যাপ নেয়। নিয়মিত সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং পরিবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখা এই বয়সে খুবই উপকারী।
৪. প্রি-স্কুলার (৩-৫ বছর)
তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। এ বয়সে বেশিরভাগ শিশু দিনে একটি ন্যাপ নেয়, তবে কিছু শিশু শুধুমাত্র রাতের ঘুমেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এই বয়সে শিশুদের ঘুমের রুটিন বজায় রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি তাদের শারীরিক এবং মানসিক বিকাশে সহায়ক।
৫. স্কুল বয়সী শিশু (৬-১৩ বছর)
স্কুলে যাওয়ার বয়সে শিশুদের দৈনিক ৯ থেকে ১১ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। এ সময়ে স্কুলের চাপ এবং অতিরিক্ত একাডেমিক কার্যকলাপের জন্য অনেক শিশুই কম ঘুমায়, যা তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এই বয়সে ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা উচিত এবং ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
৬. কিশোর (১৪-১৭ বছর)
কিশোরদের জন্য প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। কিশোর বয়সে ঘুমের চাহিদা কিছুটা কমে আসে, তবে অনেকেই শিক্ষা এবং সামাজিক জীবনের চাপের কারণে প্রয়োজনীয় ঘুম পায় না। ঘুমের অভাব তাদের মনোযোগ, স্মৃতিশক্তি এবং মেজাজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
শিশুদের পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য পরামর্শ
- ঘুমানোর নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে দূরে রাখুন: ঘুমানোর আগে টিভি, মোবাইল বা ট্যাবলেট ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এগুলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।
- একটি শান্ত পরিবেশ তৈরি করুন: শিশুর ঘুমানোর ঘরটি আরামদায়ক এবং শান্ত হওয়া উচিত। অতিরিক্ত আলো বা শব্দ থেকে দূরে রাখুন।
- ঘুমানোর আগে হালকা গল্প বলুন বা গান গাইতে পারেন: এটি শিশুর মস্তিষ্ককে শিথিল করে এবং সহজেই ঘুমিয়ে পড়তে সহায়ক।
সঠিক পরিমাণে ঘুম শিশুর স্বাস্থ্য এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বয়স অনুযায়ী ঘুমের চাহিদা এবং একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই সময়মতো শিশুর ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিটি অভিভাবককে মনোযোগী হতে হবে।