বিড়ালের জনপ্রিয় জাত, তাদের চেনার উপায় ও স্বাভাবিক আচরণ: আপনার পোষা বিড়ালের সম্পূর্ণ গাইড
বিড়াল পোষা প্রাণী হিসেবে পৃথিবীর অনেক দেশে জনপ্রিয়। তাদের বিভিন্ন জাত রয়েছে, প্রতিটি জাতের বিড়ালের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও আচরণ রয়েছে। এ ব্লগে আমরা বিড়ালের কয়েকটি বিখ্যাত জাত, তাদের চেনার উপায় এবং স্বাভাবিক আচরণ সম্পর্কে আলোচনা করব।
১. পার্সিয়ান (Persian Cat)
চেনার উপায়:
- লম্বা ও ঘন লোম।
- গোলাকার মুখ এবং ছোট নাক।
- বড় বড় চোখ, সাধারণত নীল বা সবুজ।
- গায়ের রং: সাদা, কালো, ধূসর, সোনালি প্রভৃতি।
আচরণ:
- শান্ত ও শান্তিপ্রিয়।
- আদুরে এবং মনোযোগ পেতে ভালোবাসে।
- খুব বেশি একটিভ না, সাধারণত অলস থাকে।
- বাচ্চাদের সাথে ভালো মানিয়ে চলে।
২. সিয়ামিজ (Siamese Cat)
চেনার উপায়:
- লম্বা, সরু এবং মাংসল দেহ।
- চমৎকার নীল চোখ।
- শরীরের রং সাধারণত সাদা বা হালকা বেইজ এবং কান, পা, লেজ, এবং মুখ গাঢ়।
আচরণ:
- অনেক বেশি কথা বলে, ‘মিয়াও’ শব্দ বেশি করে।
- সামাজিক, মানুষের সান্নিধ্য পছন্দ করে।
- খুবই চঞ্চল এবং খেলতে ভালোবাসে।
- পরিবারের সাথে মানিয়ে নিতে দক্ষ।
৩. বেঙ্গল (Bengal Cat)
চেনার উপায়:
- লেপার্ডের মতো দাগযুক্ত বা মার্বেল প্যাটার্নযুক্ত শরীর।
- শরীরের আকৃতি বড় এবং শক্তিশালী।
- চোখের রং সবুজ বা সোনালি।
আচরণ:
- খুবই চঞ্চল এবং শক্তিশালী।
- জল নিয়ে খেলা পছন্দ করে।
- বুদ্ধিমান, দ্রুত শিখতে পারে।
- অন্য প্রাণীর সাথে ভালো মানিয়ে নেয়।
৪. ব্রিটিশ শর্টহেয়ার (British Shorthair)
চেনার উপায়:
- গোলাকার মুখ এবং ভারী শরীর।
- ছোট ও ঘন লোম।
- চোখের রং সাধারণত কপার বা অন্ধকার বাদামী।
আচরণ:
- মৃদুভাষী, খুব বেশি ‘মিয়াও’ করে না।
- স্বাধীন এবং শান্তপ্রিয়।
- আদুরে, কিন্তু খুব বেশি মনোযোগ দাবি করে না।
- সহজেই মানিয়ে নিতে পারে, বিশেষ করে ঘরে থাকার ক্ষেত্রে।
৫. মেইন কুন (Maine Coon)
চেনার উপায়:
- অত্যন্ত বড় আকার, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গৃহপালিত বিড়াল।
- লম্বা লোম, বিশেষত লেজের লোম অনেক ঘন।
- কান বড় এবং লোমে ঢাকা।
আচরণ:
- বন্ধুত্বপূর্ণ এবং চঞ্চল।
- অনেক বেশি সামাজিক এবং মানুষের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করে।
- বাচ্চাদের সাথে বেশ মিশুক এবং পরিবারের জন্য আদর্শ।
- খেলাধুলা এবং শারীরিক সক্রিয়তা পছন্দ করে।
৬. র্যাগডল (Ragdoll Cat)
চেনার উপায়:
- বড় আকারের, নীল চোখের।
- লোম মাঝারি থেকে লম্বা এবং মোলায়েম।
- গায়ের রং সাধারণত সাদা, ধূসর, বা ব্রাউন।
আচরণ:
- অত্যন্ত শান্ত ও মিশুক।
- আদুরে এবং কোলে থাকতে ভালোবাসে।
- পরিবারের সকলের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ।
- সাধারণত অলস এবং সহজে মেনে চলে।
৭. অ্যাবিসিনিয়ান (Abyssinian Cat)
চেনার উপায়:
- ছোট ও সরু লোম।
- তীক্ষ্ণ কান এবং দীর্ঘ পা।
- গায়ের রং সাধারণত ধূসর, লালচে বা বাদামী।
আচরণ:
- অত্যন্ত চঞ্চল এবং খেলতে ভালোবাসে।
- কৌতূহলী এবং স্বাধীনচেতা।
- মানুষের সঙ্গ উপভোগ করে, কিন্তু অনেক বেশি মনোযোগের প্রয়োজন হয় না।
- বুদ্ধিমান এবং নতুন জিনিস দ্রুত শিখতে পারে।
৮. স্কটিশ ফোল্ড (Scottish Fold)
চেনার উপায়:
- ভাঁজ করা বা বাঁকানো কান, যা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য।
- গোলাকার মুখ এবং বড় চোখ।
- শরীরের লোম সাধারণত ছোট ও ঘন।
আচরণ:
- শান্ত এবং আদুরে।
- পরিবারের সদস্যদের সাথে সহজে মানিয়ে নেয়।
- মৃদু স্বভাবের এবং খুব বেশি উচ্ছ্বাস দেখায় না।
- স্বাধীন ও নিজের মতো থাকতে পছন্দ করে।
বিড়ালদের আচরণের সাধারণ বৈশিষ্ট্য:
বিড়ালের আচরণ তাদের জাতভেদে আলাদা হতে পারে, তবে কিছু সাধারণ আচরণও সব বিড়ালের মধ্যে দেখা যায়। যেমন:
- খেলাধুলা করা: বেশিরভাগ বিড়ালই খেলতে ভালোবাসে এবং তারা খেলনা বা ছোট বল নিয়ে মজা করতে পছন্দ করে।
- ঘুমানো: বিড়াল সাধারণত দিনে ১২-১৬ ঘণ্টা ঘুমায়।
- নিজেকে পরিস্কার করা: বিড়াল স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের লোম চাটে এবং পরিস্কার রাখে।
- মার্কিং করা: তারা নিজেদের এলাকা নির্দিষ্ট করতে গন্ধ ছড়ায় বা নখ দিয়ে দাগ কাটে।
- মিয়াও করা: বিড়াল তাদের অনুভূতি জানাতে ‘মিয়াও’ শব্দ ব্যবহার করে, তবে এর পরিমাণ এবং স্বর জাতভেদে আলাদা হতে পারে।
বিড়ালের জাতভেদে চেনার উপায় এবং আচরণগত বৈশিষ্ট্য ভিন্ন হতে পারে। আপনার পছন্দ ও জীবনযাত্রার সাথে মিল রেখে বিড়াল নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের জাত বুঝে তাদের লালন-পালন করলে তারা অনেক বেশি সুখী ও সুস্থ থাকবে।
Tags
অন্যান্য