বাংলাদেশের জাতীয় খেলা এবং খেলোয়াড়দের বেতন
বাংলাদেশ একটি ক্রীড়াপ্রেমী দেশ, এবং ক্রিকেট ছাড়াও এখানে ফুটবল, হকি, ভলিবল, কাবাডি এবং আরও অনেক খেলা জনপ্রিয়। দেশের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তবে বিভিন্ন খেলার খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। এই ব্লগে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতীয় খেলা এবং সেই খেলাগুলোর খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো নিয়ে আলোচনা করব।
১. ক্রিকেট খেলোয়াড়দের বেতন
ক্রিকেট হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা, এবং দেশের ক্রিকেটাররা অনেক বেশি পরিচিত ও আর্থিকভাবে স্থিতিশীল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেটারদের তিনটি ফরম্যাটে (টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি) খেলার জন্য চুক্তিবদ্ধ করে। খেলোয়াড়দের বেতন ফরম্যাট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয় এবং তারা মাসিক বেতন ছাড়াও ম্যাচ ফি এবং বোনাস পেয়ে থাকেন।
ক্রিকেটারদের বেতন কাঠামো:
- টেস্ট খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: প্রায় ৪-৬ লাখ টাকা
- ওডিআই খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: প্রায় ৩-৫ লাখ টাকা
- টি-টোয়েন্টি খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: প্রায় ২-৪ লাখ টাকা
- ম্যাচ ফি:
- টেস্ট: ৬ লাখ টাকা প্রতি ম্যাচ
- ওডিআই: ৩ লাখ টাকা প্রতি ম্যাচ
- টি-টোয়েন্টি: ২ লাখ টাকা প্রতি ম্যাচ
বোনাস: বড় টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করলে এবং বিশেষ জয় পেলে খেলোয়াড়রা বোনাস পান। এছাড়াও, স্পন্সরশিপ এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেও ক্রিকেটাররা বড় অঙ্কের আয় করেন।
২. ফুটবল খেলোয়াড়দের বেতন
ফুটবল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা। দেশের ফুটবল খেলোয়াড়দের বেতন ক্রিকেটারদের তুলনায় কম হলেও, ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ফুটবলারদের উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (BPL) ফুটবল চালু হওয়ার পর থেকে ফুটবলারদের আয় কিছুটা বেড়েছে।
ফুটবলারদের বেতন কাঠামো:
- জাতীয় দলের ফুটবলারদের মাসিক বেতন: ১-২ লাখ টাকা
- ম্যাচ ফি: ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা (প্রতিটি ম্যাচের জন্য)
- ক্লাব পর্যায়ে আয়: ফুটবলাররা ক্লাব থেকে আলাদাভাবে বেতন পান, যা বছরে ১০-৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে, খেলোয়াড়ের যোগ্যতা ও ক্লাবের ওপর নির্ভর করে।
৩. হকি খেলোয়াড়দের বেতন
হকি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এর জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। দেশের হকি ফেডারেশন খেলোয়াড়দের উন্নয়নে কাজ করছে এবং কিছু বড় টুর্নামেন্ট আয়োজন করে থাকে।
হকি খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো:
- জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: ৫০,০০০ থেকে ১ লাখ টাকা
- ম্যাচ ফি: ২৫,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা
৪. কাবাডি খেলোয়াড়দের বেতন
কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা এবং গ্রামীণ এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ দল কাবাডিতে ভালো পারফর্ম করে আসছে, যদিও খেলোয়াড়দের আর্থিক অবস্থা অন্যান্য খেলার তুলনায় দুর্বল।
কাবাডি খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো:
- জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: ২০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা
- ম্যাচ ফি: ১০,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকা
- বোনাস: আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ভালো পারফর্ম করলে বোনাস প্রদান করা হয়।
৫. ভলিবল খেলোয়াড়দের বেতন
ভলিবল বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় খেলা, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়। দেশের ভলিবল ফেডারেশন নিয়মিত প্রতিযোগিতা আয়োজন করে এবং খেলোয়াড়দের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ভলিবল খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো:
- জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: ৩০,০০০ থেকে ৭০,০০০ টাকা
- ম্যাচ ফি: ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা
৬. আর্চারি খেলোয়াড়দের বেতন
বাংলাদেশের আর্চারি খেলা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, বিশেষ করে রোমান সানার মতো প্রতিভাবান আর্চারদের আবির্ভাবের পর থেকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো পারফর্ম করার কারণে আর্চারদের প্রতি এখন সরকারের নজর বেড়েছে।
আর্চারি খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো:
- জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: ৩০,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা
- ম্যাচ ফি ও অন্যান্য ভাতা: প্রতিযোগিতা অনুযায়ী আয় পরিবর্তিত হয়
৭. অ্যাথলেটিক্স খেলোয়াড়দের বেতন
অ্যাথলেটিক্স বাংলাদেশের একটি উদীয়মান খেলা। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতা আয়োজিত হয়। তবে অ্যাথলেটিক্স খেলোয়াড়দের বেতন তুলনামূলকভাবে কম।
অ্যাথলেটিক্স খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামো:
- জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের মাসিক বেতন: ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা
- ম্যাচ ফি ও পুরস্কার: প্রতিযোগিতার ওপর নির্ভরশীল
বাংলাদেশে ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবল, হকি, কাবাডি এবং অন্যান্য খেলাগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তবে খেলোয়াড়দের বেতন কাঠামোতে পার্থক্য রয়েছে। ক্রিকেটাররা বেশি বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা পেলেও, অন্যান্য খেলার খেলোয়াড়দের বেতন তুলনামূলক কম। তবে দেশের বিভিন্ন ফেডারেশন এবং সরকার খেলোয়াড়দের উন্নয়নে নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে, যা ভবিষ্যতে দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে আরো বড় পরিবর্তন আনতে পারে।