শারীরিক কোন সমস্যায় কোন মেডিকেল পরীক্ষা করাবেন?
 |
কোন রোগে কোন মেডিকেল টেস্ট |
স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা দ্রুত সনাক্ত করতে, চিকিৎসার জন্য সঠিক পরীক্ষা করানো দরকার। নিচে কয়েকটি সাধারণ শারীরিক সমস্যার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. জ্বর বা সংক্রমণজনিত সমস্যা
- সিবিসি (Complete Blood Count): শরীরে সংক্রমণ আছে কি না জানতে CBC পরীক্ষার ফলাফল দেখুন। এতে রক্তের শ্বেত কণিকার সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে সংক্রমণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
- ইএসআর (Erythrocyte Sedimentation Rate): এই পরীক্ষায় যদি ESR এর মান বেশি আসে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদি সংক্রমণ বা প্রদাহের ইঙ্গিত দিতে পারে।
২. ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তে শর্করা - ডায়াবেটিস পরীক্ষা কখন করবেন
- ফাস্টিং ব্লাড সুগার (FBS) এবং HbA1c: ডায়াবেটিস আছে কি না বা নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা জানতে এই পরীক্ষা করা হয়। HbA1c গত তিন মাসের গড় ব্লাড সুগার লেভেল বুঝতে সাহায্য করে।
- Oral Glucose Tolerance Test (OGTT): গর্ভবতী নারীদের ডায়াবেটিস ঝুঁকি থাকলে OGTT করা হয়।
৩. কোলেস্টেরল বা হৃদরোগ ঝুঁকি
- লিপিড প্রোফাইল (Lipid Profile): কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা জানতে এই পরীক্ষা করা হয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণে সহায়ক।
- ইসিজি (ECG): হৃদযন্ত্রের বৈদ্যুতিক কার্যক্রম বুঝতে ECG গুরুত্বপূর্ণ। বুকে ব্যথা, ধড়ফড় ইত্যাদি হলে ইসিজি করে দেখা হয়।
৪. কিডনি সমস্যা
- রেনাল ফাংশন টেস্ট (RFT): কিডনির কার্যক্ষমতা জানার জন্য ক্রিয়েটিনিন, ইউরিয়া এবং ইলেক্ট্রোলাইট লেভেল নির্ধারণ করতে RFT করা হয়।
- ইউরিন টেস্ট: মূত্র পরীক্ষায় কিডনির কার্যকারিতা এবং কোনো সংক্রমণ আছে কি না তা বোঝা যায়।
 |
কোন রোগে কোন মেডিকেল টেস্ট |
৫. লিভার সমস্যা
- লিভার ফাংশন টেস্ট (LFT): যকৃতের কার্যক্ষমতা বোঝার জন্য ALT, AST, বিলিরুবিন এবং এলকালাইন ফসফাটেজ পরীক্ষা করা হয়।
৬. থাইরয়েড সমস্যা
- টিএসএইচ (TSH) এবং T3, T4 টেস্ট: থাইরয়েড হরমোনের স্তর পরিমাপ করতে এসব পরীক্ষা করা হয়।
৭. হাড়ের সমস্যা বা আঘাত
- এক্স-রে: হাড় ভাঙা বা ফ্র্যাকচারের ক্ষেত্রে এক্স-রে করে হাড়ের অবস্থা দেখা হয়।
- বোন মিনারেল ডেনসিটি (BMD): অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপ করতে BMD পরীক্ষা করা হয়।
৮. পেটের সমস্যা
- আল্ট্রাসনোগ্রাম: পেটের বিভিন্ন সমস্যা যেমন গলব্লাডার, কিডনি বা লিভারের অবস্থা জানার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
- এন্ডোস্কপি এবং কলোনোস্কপি: গ্যাস্ট্রিক সমস্যা বা পেটের অভ্যন্তরীণ অবস্থার বিশ্লেষণের জন্য এই পরীক্ষাগুলি করা হয়।
৯. ক্যান্সার শনাক্তকরণ
- পিএসএ (PSA) টেস্ট: পুরুষদের প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি যাচাই করতে PSA টেস্ট করা হয়।
- ম্যামোগ্রাম: স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্তকরণের জন্য মহিলাদের ম্যামোগ্রাম করানো হয়, বিশেষ করে ৪০-এর পর।
- প্যাপ স্মিয়ার: জরায়ুমুখ ক্যান্সারের ঝুঁকি যাচাই করতে মহিলাদের প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট করা হয়।
- CT এবং PET স্ক্যান: শরীরের কোথাও টিউমার বা ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকলে এই স্ক্যানের মাধ্যমে বিশদ তথ্য পাওয়া যায়।
১০. হরমোন ভারসাম্য এবং প্রজনন সমস্যা
- ফার্টিলিটি টেস্ট: গর্ভধারণে সমস্যা থাকলে মহিলা ও পুরুষ উভয়ের জন্য বিভিন্ন হরমোন টেস্ট, যেমন FSH, LH, প্রোল্যাক্টিন ইত্যাদি করা হয়।
- PCOS শনাক্তকরণ: পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীদের জন্য টেস্টোস্টেরন, ইন্সুলিন সহ কিছু নির্দিষ্ট পরীক্ষা করা হয়।
১১. ভিটামিন এবং মিনারেল ডেফিসিয়েন্সি
- ভিটামিন ডি এবং বি১২ টেস্ট: ক্লান্তি, হাড়ের ব্যথা বা মানসিক অবসাদ থাকলে ভিটামিন ডি এবং বি১২ লেভেল পরীক্ষা করা যেতে পারে।
- ক্যালসিয়াম এবং আয়রন লেভেল: হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্যালসিয়াম এবং রক্তাল্পতার জন্য আয়রন পরীক্ষা করা প্রয়োজন হতে পারে।
১২. এলার্জি টেস্ট
- ইমিউনোগ্লোবুলিন ই (IgE) টেস্ট: যাদের বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জির প্রবণতা রয়েছে, তাদের IgE পরীক্ষা করতে বলা হয়।
- স্কিন প্রিক টেস্ট এবং র্যাস্ট (RAST) টেস্ট: বিভিন্ন খাদ্য বা ধুলা-ধোঁয়ার অ্যালার্জি চিহ্নিত করতে এই পরীক্ষা করা হয়।
১৩. স্ট্রোক বা স্নায়ুজনিত সমস্যা
- MRI এবং CT স্ক্যান: মস্তিষ্কের যে কোনো সমস্যা, যেমন স্ট্রোক বা ব্রেইন টিউমার শনাক্ত করতে MRI এবং CT স্ক্যান ব্যবহৃত হয়।
- ইএমজি (Electromyography): স্নায়ু এবং পেশির কার্যকারিতা পরিমাপ করতে ইএমজি টেস্ট করা হয়।
১৪. মোট বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা
- বার্ষিক ফুল বডি চেকআপ: সাধারণত এতে বিভিন্ন মৌলিক টেস্ট যেমন রক্ত, ইউরিন, কোলেস্টেরল, লিভার এবং কিডনি ফাংশন টেস্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে।
১৫. সিজনাল রোগের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
- ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এবং চিকুনগুনিয়া টেস্ট: বর্ষাকালে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। এই ক্ষেত্রে ডেঙ্গু NS1 অ্যান্টিজেন, IgM, এবং ম্যালেরিয়া রক্তের স্মিয়ার পরীক্ষা সহ চিকুনগুনিয়ার জন্য বিশেষ টেস্ট করানো যেতে পারে।
- ইনফ্লুয়েঞ্জা টেস্ট: শীতের মৌসুমে সিজনাল ফ্লু বা ইনফ্লুয়েঞ্জা পরীক্ষা করার জন্য, সাধারণত থ্রোট বা নাকের সোয়াব নিয়ে ইনফ্লুয়েঞ্জা টেস্ট করা হয়।
১৬. বয়সভিত্তিক প্রিভেন্টিভ টেস্ট
- ৪০-এর পর: রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, প্রস্টেট (পুরুষদের জন্য), এবং ম্যামোগ্রাম (নারীদের জন্য)।
- ৫০-এর পর: কোলন ক্যান্সার স্ক্রিনিং, ডেক্সা স্ক্যান (হাড়ের ঘনত্ব পরিমাপের জন্য), এবং গ্লুকোমা চেকআপ।
১৭. জীবনযাত্রা ও পেশা ভিত্তিক পরীক্ষা
- কার্ডিওভাসকুলার চেকআপ: যাদের জীবনযাত্রা স্থবির বা স্ট্রেস বেশি, তাদের জন্য রেগুলার কার্ডিওভাসকুলার চেকআপ প্রয়োজন।
- পেশাগত সংক্রমণ ও বিষাক্ততা পরীক্ষা: যারা রাসায়নিক বা দূষণময় পরিবেশে কাজ করেন তাদের নিয়মিত টক্সিসিটি এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা পরীক্ষা করানো গুরুত্বপূর্ণ।
১৮. মেন্টাল হেলথ বা মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা
- মেন্টাল হেলথ স্ক্রিনিং টেস্ট: মানসিক স্বাস্থ্য যাচাই করার জন্য বিভিন্ন স্ক্রিনিং টেস্ট করা হয় যেমন PHQ-9 (ডিপ্রেশনের জন্য) এবং GAD-7 (অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডারের জন্য)। মানসিক চাপ, বিষণ্ণতা বা উদ্বেগ থাকলে এই ধরনের স্ক্রিনিং টেস্ট করা যেতে পারে।
- সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট এবং কাউন্সেলিং: ডিপ্রেশন, বায়পোলার ডিসঅর্ডার বা সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক সমস্যায় নির্ধারিত সাইকোলজিক্যাল অ্যাসেসমেন্ট ও কাউন্সেলিং অত্যন্ত কার্যকর।
১৯. গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় পরীক্ষা
- অ্যান্টেনেটাল প্রোফাইল: গর্ভাবস্থার শুরুতেই হেপাটাইটিস বি, এইচআইভি, সিফিলিস ইত্যাদি রোগ নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন টেস্ট করানো হয়।
- আল্ট্রাসনোগ্রাম: গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে বাচ্চার বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্য নির্ধারণ করা হয়।
- গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্ট: গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য এই পরীক্ষা করা হয়।
২০. খাদ্যাভ্যাস ও পুষ্টি ভিত্তিক পরীক্ষা
- ফুড ইনটলারেন্স টেস্ট: কারও দুধ, গ্লুটেন বা বিশেষ কোনো খাদ্যের প্রতি সংবেদনশীলতা থাকলে, এই টেস্টের মাধ্যমে তা নির্ধারণ করা যায়।
- মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট টেস্ট: শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন, মিনারেল বা অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতি নির্ধারণে এই পরীক্ষা করানো হয়।
 |
কোন রোগে কোন মেডিকেল টেস্ট |
ডায়াবেটিস পরীক্ষা কখন করবেন
কোন রোগে কোন মেডিকেল টেস্ট
চিকিৎসকের পরামর্শে পরীক্ষা করানোর গুরুত্ব
বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা কেন প্রয়োজন
হৃদরোগের ঝুঁকি পরীক্ষা
FAQ
প্রশ্ন: কত বছর বয়স থেকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত?
উত্তর: সাধারণত ৩০ বছর বয়সের পর নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো শুরু করা ভালো।প্রশ্ন: কোন কোন পরীক্ষার জন্য না খেয়ে থাকতে হয়?
উত্তর: ফাস্টিং ব্লাড সুগার, লিপিড প্রোফাইল, এবং গ্লুকোজ টলারেন্স টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট সময় না খেয়ে থাকতে হয়।