বিড়ালের শিকারি আচরণের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য

 বিড়ালের শিকারি আচরণের ১০টি চমকপ্রদ তথ্য

বিড়াল এমন একটি প্রাণী, যা গৃহপালিত হলেও তার প্রাচীন শিকারি প্রবৃত্তি আজও বহাল রয়েছে। আপনি যতই বিড়ালকে বাড়ির আরামদায়ক পরিবেশে রাখেন না কেন, তার শিকারি স্বভাব সহজে মুছে যায় না। চলুন জেনে নিই বিড়ালের শিকারি আচরণ নিয়ে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য, যা আপনাকে তাদের আচার-ব্যবহার বুঝতে সাহায্য করবে।

১. প্রাচীন শিকারি স্বভাব

বিড়ালের পূর্বপুরুষরা ছিল বন্য এবং শিকারি। যদিও আজকের বিড়ালরা গৃহপালিত, তাদের মস্তিষ্কে সেই শিকারি প্রবৃত্তি রয়ে গেছে। তাই আপনি লক্ষ্য করবেন, ঘরে ছোটখাটো পোকামাকড় বা খেলনা ধরতে তারা বেশ দক্ষ এবং ধৈর্যশীল।

২. দর্শন এবং শ্রবণের ক্ষমতা

বিড়ালের দৃষ্টিশক্তি এবং শ্রবণশক্তি অত্যন্ত প্রখর। তারা অন্ধকারেও সহজে দেখতে পায় এবং দুর্বল শব্দ শুনতে পারে। এ ক্ষমতাগুলো তাদের শিকার ধরতে সাহায্য করে। গোধূলি বা রাতের বেলায় তারা সবচেয়ে সক্রিয় হয়, যেহেতু এসময় তাদের শিকার বেশি পাওয়া যায়।

৩. ধীরে ধীরে এগিয়ে আসা

বিড়ালরা শিকার ধরতে গেলে কখনোই তাড়াহুড়ো করে না। তারা ধীরে ধীরে এবং নিঃশব্দে শিকার লক্ষ্য করে সামনে এগোয়। তাদের পেছনের পা এবং শরীরকে প্রায় মাটির সাথে মিশিয়ে শিকারির দিকে আগাতে দেখা যায়। ধৈর্যের সাথে সঠিক সময়ের অপেক্ষায় থাকে তারা।

৪. প্যান্টোমিম আক্রমণ

বিড়ালের শিকার ধরার একটি নির্দিষ্ট কৌশল রয়েছে, যাকে বলা হয় “প্যান্টোমিম আক্রমণ”। শিকার লক্ষ্য করে তারা তাদের শরীরকে এক মুহূর্ত স্থির করে রাখে, যেন শিকার তাদের উপস্থিতি টের না পায়। তারপর হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকার ধরে ফেলে।

৫. খেলনাকে শিকার মনে করা

আপনার বিড়াল যখন ঘরের খেলনা নিয়ে খেলা করে, তখন সেটি আসলে তার শিকারি আচরণেরই অংশ। খেলনাকে শিকার হিসেবে ধরে নিয়ে তারা তার সাথে ধাওয়া, আক্রমণ, এবং ধরার চেষ্টা করে। এ আচরণ মূলত তাদের মানসিক প্রশিক্ষণের একটি প্রক্রিয়া।

৬. ধৈর্য এবং সময় নেয়া

বিড়ালের শিকারি আচরণের মধ্যে অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হলো ধৈর্য। শিকার ধরার জন্য তারা লুকিয়ে থাকতে পারে অনেকক্ষণ পর্যন্ত, শুধুমাত্র সঠিক সময়ের অপেক্ষায়। শিকার ধরার এ ধৈর্য এবং সময় নেয়া তাদের প্রাকৃতিক আচরণেরই অংশ।

৭. আংশিক শিকার প্রবৃত্তি

গৃহপালিত বিড়ালদের অনেক সময় সম্পূর্ণ শিকার ধরার প্রয়োজন হয় না। তারা প্রায়ই শিকার ধরার পর ছেড়ে দেয় বা মেরে ফেলে, কিন্তু তা খায় না। গৃহে সুরক্ষিত থাকা বিড়ালদের জন্য খাবারের প্রয়োজন না থাকলেও শিকারি প্রবৃত্তি তাদের আচরণের অংশ হিসেবে রয়ে গেছে।

৮. পাখি এবং ইঁদুরে আকর্ষণ

বিড়ালদের প্রাকৃতিক শিকার হলো পাখি এবং ইঁদুর। তারা প্রাচীনকাল থেকেই এ প্রাণীদের শিকার করে এসেছে। আজও যদি আপনার বিড়ালকে বাইরে ছাড়া হয়, আপনি দেখবেন তারা ইঁদুর বা পাখির প্রতি বিশেষ আগ্রহী এবং তাদের দিকে ধাওয়া করার চেষ্টা করে।

৯. শিকার ধরে মালিকের কাছে আনা

অনেক বিড়াল শিকার ধরে তা তাদের মালিকের সামনে নিয়ে আসে। এটা বিড়ালের ভালোবাসা বা বিশ্বাসের একটি নিদর্শন হতে পারে। শিকার ধরে আনার মাধ্যমে তারা তাদের মালিককে সাহায্য করতে চায় বা স্নেহ দেখাতে চায় বলে ধারণা করা হয়।

১০. শিকারের জন্য কৌতূহলী দৃষ্টি

বিড়ালদের চোখে কৌতূহল ফুটে ওঠে যখন তারা শিকার লক্ষ্য করে। তারা চোখের পলক না ফেলে শিকারের গতিবিধি অনুসরণ করে। এসময় তাদের চোখের মণি প্রশস্ত হয়, যা তাদের দৃষ্টিশক্তিকে আরও তীক্ষ্ণ করে এবং শিকারের প্রতি মনোযোগ বাড়ায়।

বিড়ালের শিকারি আচরণ তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তির অংশ। যদিও তারা আজ মানুষের সহচর হিসেবে বাস করে, তাদের এ প্রাকৃতিক স্বভাব রয়ে গেছে। শিকারি আচরণ শুধু খাবার সংগ্রহের জন্য নয়, এটি তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিড়ালের এই আচরণকে যদি আপনি ভালোভাবে বোঝেন, তবে তাদের সাথে সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন